Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী

২৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩১৭ এপ্রিল ১৯২৯

Syed Nawab Ali Chowdhury.JPG

http://bits.wikimedia.org/static-1.24wmf5/skins/common/images/magnify-clip.png

জন্ম তারিখ:

ডিসেম্বর ২৯, ১৮৬৩

জন্মস্থান:

টাঙ্গাইল, ধনবাড়ীব্রিটিশ ভারত

মৃত্যু তারিখ:

এপ্রিল ১৭, ১৯২৯ (৬৫ বছর)

মৃত্যুস্থান:

দার্জিলিং, ব্রিটিশ ভারত°

জীবনকাল:

২৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩১৭ এপ্রিল ১৯২৯

আন্দোলন:

বঙ্গভঙ্গ

'নওয়াব বাহহদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী(জন্ম: ২৯ ডিসেম্বর,১৮৬৩; মৃত্যু: ১৭ এপ্রিল,১৯২৯) বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার দৌহিত্র মোহাম্মদ আলী বগুড়াপাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তার এক পুত্র সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরীপুর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

পরিচ্ছেদসমূহ

জন্ম ও শৈশব

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c0/Mosque_Dhonobari_Tangail.jpg/220px-Mosque_Dhonobari_Tangail.jpg

http://bits.wikimedia.org/static-1.24wmf5/skins/common/images/magnify-clip.png

টাঙাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের ৭০০ বৎসর পুরোনো মসজিদ। প্রায় চারশত বৎসর পূর্বে এই মসজিদের সংস্কার করা হয়। তারপর থেকে মসজিদটি এই অবস্থায়ই আছে

নওয়াব সাহেব ১৮৬৩সালের ২৯ ডিসেম্বরটাঙ্গাইল জেলারধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আড়াইশ বছর আগে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রপিতামহ শাহ সৈয়দ খোদা বক্স বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তার আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি এফ.এ. পাশ করেন।

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/8d/Nabab_Estate_Tangail_Dhobobari.jpg/220px-Nabab_Estate_Tangail_Dhobobari.jpg

http://bits.wikimedia.org/static-1.24wmf5/skins/common/images/magnify-clip.png

নবাব এস্টেটের অফিস ভবন, টাঙ্গাইল, ধনবাড়ী।

সাহিত্য সংস্কৃতি

১৮৯৫থেকে ১৯০৪পর্যন্ত নওয়াব সাহেবের কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক। ১৮৯৫সালে মিহিরসুধাকর পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক মিহির-সুধাকর নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। এজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।

শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ---

  • ঈদুল আযহা (১৮৯০)
  • মৌলুদ শরীফ (১৯০৩)
  • ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০)
  • প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬)

রাজনীতিতে প্রবেশ

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/40/Nabab_Estate_Office_Tangail_Dhobobari2.jpg/220px-Nabab_Estate_Office_Tangail_Dhobobari2.jpg

http://bits.wikimedia.org/static-1.24wmf5/skins/common/images/magnify-clip.png

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের বৈঠকখানা। বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ সফরে এলে, এই ভবনেই নবাব সাহেবের সাথে তার বৈঠক হয়। এই ঘরটিতে আসবাব পত্র এখনও ঠিক সেভাবেই সাজানো আছে, যেভাবে সেদিনের বৈঠকের সময় সাজানো ছিল।

১৯০৫সালে বঙ্গভঙ্গআন্দোলন থেকে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯০৫সালের ১৬ অক্টোবরহিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা ও আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করলে নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯০৫সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার নর্থব্রুক হলেতার ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহেরউদ্দোগে প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। তিনি বংগ ভঙ্গ সম্পর্কে বলেন ,"প্রদেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে চেষ্ঠা সফল হয় নাই তথাপিও পুর্ব বঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে, আমরা যাহার জন্য চেষ্ঠা করিয়াছিলাম তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ঐ প্রদেশের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

১৯১১সালে ২৯ আগস্টঢাকারকার্জন হলেল্যান্সলট হেয়ারেরবিদায় এবং চার্লস বেইলিরযোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। ১৯১২সালের ৩১ জানুয়ারিলর্ড হার্ডিঞ্জেরঢাকায়অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গরদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিটিগঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯১৪সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধচলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি বিষয়টি আবার ১৯১৭সালের ৭ মার্চইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। ১৯২০সালের মার্চ ১৮ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিনত হয় এবং ২৩ মার্চতা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নয় বছর পর ১৯২১সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২সালে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন।

http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/3/3d/Nabab_ali_chowdhury_Senate_bhobon_DU.jpg/220px-Nabab_ali_chowdhury_Senate_bhobon_DU.jpg

http://bits.wikimedia.org/static-1.24wmf5/skins/common/images/magnify-clip.png

নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২০০৩সালের ৯ জুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যএস. এম. এ. ফায়েজেরসভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম "সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন" করা হয়।

শিক্ষাবিস্তার

নওয়াব আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯২৯সালের এপ্রিল ১৭ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯১০সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে নওয়াব ইনস্টিটিউট নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া,গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন।

মাতৃভাষার প্রতি অবদান

নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১সালের রংপুরঅধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন, "বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে?তৎকালীন প্রতিকুল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২১সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারী ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।

বিভিন্ন পদবি লাভ

১৮৯৬সালে খান বাহাদুর,১৯১১সালে নওয়াব,১৯১৮সালে কমান্ডার অব দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার(সিআইই) এবং ১৯২৪সালে নওয়াব বাহাদুরপদবি লাভ করেন।

মৃত্যু

এই মহান পুরুষ ১৭ এপ্রিল১৯২৯(বাংলা ১৩৩৬, ১ বৈশাখ) দার্জিলিংয়ে(বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন।